বাড়ির সোফায় বসে টিভিতে খবর শুনছিলেন জাস্টিস চ্যাটার্জী। ঠিক তখনই একটা খবরে তিনি হতবাক হয়ে যান,- '
বাড়ির সোফায় বসে টিভিতে খবর শুনছিলেন জাস্টিস চ্যাটার্জী। ঠিক তখনই একটা খবরে তিনি হতবাক হয়ে যান,- ' বাজারের মধ্যে উলঙ্গ এক মহিলা নৃশংসভাবে খুন করলেন যুবককে। কারণ অনিশ্চিত... ' বাকি কথা আর শুনতে পেলেন না তিনি। একরকম ভুলেই গিয়েছিলেন কেসটার কথা ।এক সপ্তাহ পরে একদিন সকালে জাস্টিস চ্যাটার্জী কোর্টে পৌঁছেই জানতে পারলেন সেই নৃশংস ঘটনার বিচার তার এজলাসেই হবে।
-
ঠিক বেলা এগারোটায় শুরু হল কোর্টের কার্যাবলী।
- কেস নম্বর ৩২০...
ডাক পড়তেই তাঁর সামনে হাজির হল গতসপ্তাহে টিভির পর্দায় দেখা সেই নারীমূর্তি। তবে অদ্ভুতভাবে তার চোখে অনুতাপের লেশমাত্র নেই, বরং চোখে জ্বলছে আগুন আর ঠোঁটের কোণে একচিলতে হাসি।
বলুন যাহা বলিব সত্য বলিব, সত্য বই মিথ্যা বলিব না।
- যা বলব সত্যি বলব,সত্যি ছাড়া মিথ্যে বলব না।
এরপর মহামান্য বিচারপতির আদেশে সরকার পক্ষের উকিল শুরু করলেন জিজ্ঞাসাবাদ।
- আপনার নাম?
- মালা।
- পুরো নাম বলুন!
- মালা দাস।
- আপনি কী করেন?
- আর কতবার এই একই প্রশ্নের উত্তর দেব? কী পেয়েচেন আমাকে?
বলাই বাহুল্য এই এক সপ্তাহে মালাকে প্রশ্নে প্রশ্নে জর্জরিত করে তুলেছে পুলিশ।
সরকার পক্ষের উকিল একটু বিরক্ত হয়ে বলেন
- যতবার প্রশ্ন করা হবে ততবার আপনি উত্তর দিতে বাধ্য, বুঝেছেন?
কথা শেষ হতে না হতেই চারদিকে চাপা গুঞ্জন শুরু হয়।
- অর্ডার, অর্ডার!
আবারও শুরু হয় প্রশ্নোত্তর পর্ব।
- আপনি কী করেন?
- লোকের বাড়ি কাজ করি।
- শেষ বাড়িতে কতবছর হল কাজ করছেন?
- তিন বছর হতে চলল।
- আপনার অভিযোগটা ঠিক কী ছিল?
- ওই বাড়ির একমাত্র ছেলে আমাকে একমাস ধরে ধর্ষণ করছিল!
- কী করে বিশ্বাস করব আপনাকে?
- এই উকিল বাবু শুনে রাখেন আপনি আমায় বিশ্বাস না করলেও আমার কিছু করতে পারবেননি। আমি আমার প্রতিশোধ নিয়ে নিয়েছি। আর যা করেছি বেশ করেছি, প্রয়োজন হলে আবার করব।
- মুখ সামলে কথা বলুন, এটা আদালত।
- কীসের আদালত এটা? হ্যাঁ? যেখানে দোষী কোনো শাস্তি না পেয়ে বাইরে ঘুরে বেড়ায় সেটা কীসের আদালত?
- আদালত অবমাননার দায়ে আপনার জেল হতে পারে জানেন!
- হোক!
বলে চুপ করে থাকে মালা আর রাগে ফুঁসতে থাকে।
জাস্টিস চ্যাটার্জি সরকার পক্ষের উকিলকে কথা এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ করেন। উকিল তাতে সায় দিয়ে কাঠগড়ায় উপস্থিত মালার সামনে এসে দাঁড়ান।
- এবার আমার শেষ প্রশ্ন..
- আপনার প্রশ্ন এ জন্মে আর শেষ হবে না!
একটা তাচ্ছিল্যের হাসি ছুঁড়ে দেয় মালা। উকিল নিজেকে অতিকষ্টে নিজেকে সংযত করে প্রশ্ন করলেন।
- মহামান্য আদালতের কাছে ঠিক কী হয়েছিল খুলে বলুন!
-গত তিন বছর ধরে আমি ওই বাড়িতে কাজ করছি। দাদা-বৌদি দুজনেই বেশ ভালো মানুষ, কোনো অসুবিধা ছিল না। সকালে আসতাম, কাজ করে , রান্না করে , গুছিয়ে সন্ধ্যে নাগাদ বাড়ি চলে যেতাম, কিন্তু আসল সমস্যা শুরু ওনাদের একমাত্ত ছেলে বাড়ি আসার পর। প্রথম থেকেই ছোটোবাবুর চাউনি আমার ভালো লাগত না। নানা ছুতোয় উনি আমার গায়ে হাত দিতেন। শুরুতে মনের ভুল বলে মনে হলেও পরে দেখলাম আমার ভাবনাই ঠিক। এরপর একদিন দাদা-বৌদির ঘরে না থাকার সুযোগে ছোটোবাবু আমাকে ধর্ষণ করে। মুখ বন্ধ রাখার হুমকি দিয়েছিল ওই জানোয়ারটা। আমি ভয়ে, লজ্জায় কাউকে কিছু জানাতে পারি নি। দিনের পর দিন অত্যাচারের পরিমাণ বাড়তে থাকে। দিনরাত যোনি থেকে রক্ত পড়ত, ব্যাথা করত, যন্ত্রণা হত। এরপর আমি একদিন থাকতে না পেরে দাদা-বৌদিকে সবটা জানাতে তাদের আসল রূপ প্রকাশ পায়। টাকা দিয়ে আমার মুখ বন্ধ করতে চায়। দাদা বলে
-তোর এই শরীরের জন্যই তো আমার ছেলে তোর ওপর নজর দিয়েছে। তোর এত বড় বড় দুটো স্তন, সরু কোমর,- এসব তো ছেলেদের আকৃষ্ট করার ওষুধ, আর আমার ছেলেটা তোকে আদর করেছে তাতে তোর এত অসুবিধা? আরে তোর তো ভাগ্য ও তোর গায়ে হাত দিয়েছে।
- আমি অনেক বলার পরেও তারা আমার কথা শোনেনি । তখন আমি পুলিশে যাওয়ার কথা বললে ওই জানোয়ারটার বন্ধু ওই পুলিশবাবুকে (সামনে থাকা এক পুলিশের দিকে নির্দেশ করে) বাড়িতে ডেকে অন্য যুক্তি দেয়, বলে সে যখন আমার যোনিতে স্পর্শ করেছিল তখন আমার যোনি ভিজে গিয়েছিল, তাই এটাকে নাকি ধর্ষণ বলা যায় না। ওইদিন রাতে ওই পুলিশবাবু আর জানোয়ারটা আমাকে একসাথে ধর্ষণ করে। আমি যন্ত্রণায় অজ্ঞান হয়ে যাই । পরদিন ভোরে যখন জ্ঞান ফেরে তখন আমি সম্পূর্ণ উলঙ্গ অবস্থায় মেঝেতে পড়ে, আর বিছানায় জানোয়ারটা। অভিযোগ করে লাভ নেই জানতাম , তাই সবার সামনেই বঁটি দিয়ে ওর পুরুষাঙ্গ কেটে দিয়েছি। আর যা করেছি বেশ করেছি। আমাকে যা শাস্তি দেবেন দিন।
জাস্টিস চ্যাটার্জি কী বলবেন বুঝে উঠতে পারলেন না। পুরো আদালত যাকে বলে পিনড্রপ সাইলেন্ট। তিনি শুধু কামনা করলেন এমন প্রতিবাদী নারী যেন প্রতিবাড়িতে থাকে, তাহলে হয়তো এই সমাজ বদলালেও বদলাতে পারে।
Comments
Post a Comment