আগে যখন বাইরে থেকে পড়াশুনো করতাম তখন ছুটিতে বাড়ি ফেরার কথা ফোন করে ঘরে জানালেই


 আগে যখন বাইরে থেকে পড়াশুনো করতাম তখন ছুটিতে বাড়ি ফেরার কথা ফোন করে ঘরে জানালেই , ফোনের ওপার থেকে বাবা বলে উঠতো , " ট্রেন এ ফিরবে বাবা , বাসে একদমই আসার দরকার নেই , ট্রেন জার্নি অনেক সেফ " । হঠাৎ করেই এই কথাটা খুব মনে পড়ে গেলো , আচ্ছা সেদিনও ঠিক হয়তো এভাবেই অনেক বাবা তার ছেলেকে উপদেশ দিয়েছিলো যে বাসে আসার দরকার নেই , তুমি করোমণ্ডল এক্সপ্রেস এই এসো , ওটা অনেক সেফ । হ্যাঁ সেফই বটে, যেখানে ক্ষণিকের ভুল এতো এতো মানুষের প্রাণের দাম দেয় , সে যাত্রা সেফ না হয়ে পারে । আমরা এতদিন জানতাম ভারতীয় রেলের হয়তো সময় জ্ঞান একটু কম, কিন্তু খুব বিশ্বস্ত । আসলে এই বিশ্বাসের যে এতো বড়ো দাম দিতে হবে , আমরা ঠিক কেউই বুঝে উঠতে পারি নি । ভারতীয় রেল নাকি প্রযুক্তির দিক দিয়ে রাশিয়া , চিন , জাপান কে টেক্কা দিচ্ছে । মাস কয়েক আগে বন্দে ভারতের বনেদিয়ানা আমাদেরকে , আমাকে এতটাই মোহ গ্রস্ত করে তুলেছিল যে শুধুই ছুতো খুঁজছিলাম বেড়াতে যাওয়ার , মানে বাড়িতে কিংবা অন্যান্য সবার কাছে সেটা নিছক বেড়ানো হলেও আমার কাছে ছিলো ওই বন্দে ভারতের বনেদিয়ানা তে মেতে ওঠা । ফেসবুক , ইউটিউব জুড়ে তখন শুধুই একটা ট্রেন বন্দেভারত , বন্দেভারতের আজ এই , কাল ওই , কারা যেনো আবার ঢিল মেরে বন্দেভারতের জাতীয়তা বোধে আঘাত হানলো , বন্দেভারতের যাত্রীদের যাত্রার অনুভূতির , অনুভবের কিছু মেকি video ও ছিলো সেই লিস্টে । আর আজ হঠাৎ করেই ফেসবুকটা স্ক্রল করতে করতে চোখে পড়লো ওড়িশার বালেশ্বর স্টেশন এর waiting রুমে রাখা রাশি রাশি লাশের মুখের অবরণ সরিয়ে সরিয়ে দেখছেন এক হতভাগ্য বাবা , যিনি এখনো পর্যন্ত তাঁর করোমণ্ডল যাত্রী ছেলের খোঁজ পাননি । কখনো ভেবে দেখেছেন এই এক একটা লাশের মুখের আবরণ সরানোর সময় ওই হতভাগ্য বাবার অনুভূতি কি হয়েছিলো , অনুভব করেছেন কি ওই বাবার হৃদস্পন্দনের কম্পাঙ্কের তীব্রতা । চোখে জল চলে এসেছিলো , বিশ্বাস করুন । এবার আপনারা ভাবছেন এতকিছু অনুভব করে আমাদের কি হবে , কি লাভ ? আমরা তো ভালো আছি , বেশ নিরাপদেই আছি । ও ট্রেন এ চড়তে গেলে একটু আধটু অ্যাকসিডেন্ট তো হবেই । আমার বক্তব্য ঠিক এখানেই , প্রযুক্তি যখন এতো উন্নতির দিকে এগোচ্ছে তখন প্রযুক্তি টা ট্রেনের বিলাসিতায় না ব্যাবহার করে , অ্যাকসিডেন্ট থেকে রক্ষা পাওয়ার কাজে ব্যাবহার করলেই ভারতমাতাকে , ভারতমাতার সন্তানদেরকে যথার্থ বন্দনা করা হয় । আগে তো সুরক্ষা , তারপরেই না বিলাসিতা ? এতো বড়ো একখানা অ্যাকসিডেন্ট যখন আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়ে গেলো যে আমাদের রক্ষার প্রাচীর কিন্তু খুব দূর্বল , আমরা যতই ওই নড়বড়ে প্রাচীরের ওপর বসে মাংস ভাত , বিরিয়ানি খাই না কেনো , প্রাচীর কিন্তু যেকোনো দিন , যেকোনো মুহূর্তে ভেঙে পড়তে পারে । আর তাতেও যদি আমাদের টনক না নড়ে , আমরা ওই ট্রেন অ্যাকসিডেন্ট শুনে আমাদের কিছু সম্ভাব্য যাত্রী সুলভ আত্মীয়দের ফোন টোন করে যথারীতি গ্রীন সিগনাল পেয়ে চুপ করে যাই । তাহলে ভেবে দেখবেন এই গ্রীন সিগনাল কিন্তু যেকোনো দিন রেড হয়ে যেতেই পারে । আচ্ছা এতো এতো মানুষের মারণ যন্ত্রণা , কান ফাটা আর্তনাদ সত্যিই কি ভারতীয় রেল কে শান্তির ঘুম ঘুমোতে দেয় , দেবে , দিয়েছিলো ?

Comments

Popular posts from this blog

বাড়ির সোফায় বসে টিভিতে খবর শুনছিলেন জাস্টিস চ্যাটার্জী। ঠিক তখনই একটা খবরে তিনি হতবাক হয়ে যান,- '